রক্তদানের নিয়ম মেনে চলে নিয়মিত রক্তদান করার জন্য আহবানঃ

রক্তদানের নিয়ম ভঙ্গ করে রক্তদান করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় :)
আজকের এই পোস্টটি কাউকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নয়, বরং রক্তদানের নিয়ম মেনে চলে নিয়মিত রক্তদান করার জন্য আহবান :)
রক্তদানের পুরো ব্যাপারটাই আসলে আবেগের... আবেগ দিয়ে রোগীর রক্তের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে হয়... যারা অন্যের কষ্ট অনুভব করতে পারে না, তাদের পক্ষে আসলে রক্তদান সম্ভব না... তাঁরা এর গুরুত্বই বুঝবে না :)
তবে কিছু কিছু ভাই-বোনদের মাঝে রক্তদানের আগ্রহ এতটাই প্রবল যে, একজন মুমূর্ষু রোগীকে সাহায্য করার জন্য রক্তদানের নিয়মগুলো ভেঙ্গে ফেলছে... কিন্তু বাস্তবতা এবং আবেগের মাঝে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হয় আমাদের... রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি জরুরী :)
আজকে কিছু কথা বলবো, আশা করি সবাই খুব পজিটিভভাবেই নিবেন ব্যাপারগুলো :)
১)
আমাদের দেশের রক্তদাতাদের শারীরিক অবস্থা অনুসারে ৪ মাস পর পর রক্তদান করা উচিত... এর আগে নেয়... তাছাড়া আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই অপুষ্টিতে ভোগেন... তাই ৪ মাসের আগে রক্তদান না করার জন্য অনুরোধ করছি... :)
লোহিত রক্ত কনিকার জীবনকাল হল ১০০ দিন থেকে ১২০ দিন... সেই সে হিসাবেও ৪ মাস গ্যাপে রক্তদান করা উচিত... :)
আমার এমন কিছু ভাই-বোন আছেন যারা ২ মাস - ৩ মাস কিংবা তার আগেই রক্তদান করে ফেলছে... মানা করেও আটকে রাখা যায় না... তাদের জন্য বলি, নির্ধারিত সময়ের আগে যদি আপনি রক্তদান করেন, তাহলে কিন্তু আপনি রোগীর উপকার করছেন না, বরং প্রত্যক্ষভাবে রোগীর অপকার করছেন... কিভাবে? কারন আপনার শরীরে রক্ত কনিকাগুলো ৪ মাসের আগে পুরোপুরি পুর্নতা পাচ্ছে না... ফলে যে ১ ব্যাগ রক্ত আপনি রোগীকে দান করে এলেন, সেই রোগী এই রক্তে পর্যাপ্ত পরিমান উপাদান পাচ্ছে না... রোগী এক ব্যাগ রক্ত পেল ঠিকই, কিন্তু রোগীর উপকার হল না :)
তাহলে কি বুঝলাম আমরা? আমাদের এখন থেকে বুদ্ধিমানের মত ৪ মাস পর পর রক্তদান করা উচিত... এর আগে না :)
২)
রক্তদান করার পর ১৫-২০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে, শুয়ে থাকতে হবে... এই ১৫-২০ মিনিটে আপনার শরীর ১ ব্যাগ রক্তের হঠাৎ এই ঘাটতি এডজাস্ট করে নেয়...
তাই, পালোয়ানের মত সাথে সাথে উঠে গেলে কিন্তু হবে না... ধপাস করে পরে গেলে কিন্তু প্রেস্টিজ পাংচার :P এবং আপনার এই অবস্থা দেখে, শুনে কিন্তু হাজারো মানুষ রক্তদানে নিরুৎসাহিত হয়ে যাবে... ভাববে, রক্তদান করলেই মনে হয় এমন হয়... আসলে কিন্তু তা নয়... ব্যাপারটা হল, আপনি রক্তদানের নিয়ম মানেননি, তাই এমন হয়েছে... :)
তাহলে কি শিখলাম, রক্তদানের পর ১৫-২০ মিনিট অবশ্যই শুয়ে রেস্ট নিতে হবে :)
৩)
"আমি তো রক্তদান করেই ১০ কিলোমিটার হেটে বাসায় গিয়েছি, বিকালে ক্রিকেটও খেলেছি, সারদিন তো খাওয়া দাওয়াও করি নাই... কই আমার তো কিছু হয় নাই" - সাহসী, পালোয়ান টাইপ রক্তদাতারা প্রায় সময়ই এমন বলেন :D
কিন্তু কাহিনী হল কি, রক্তদান করার পর পরবর্তী ২৪ ঘন্টা ভারি কাজ করা উচিত না... বেশি করে পানি খেতে হয়, খাওয়া দাওয়া করতে হয়, যতটুকু পারা যায় বিশ্রাম নিতে হয়... :)
দুর্ঘটনা কিন্তু প্রতিদিন ঘটে না... একদিনই ঘটে... দেখা গেল, রক্তদানের এই নিয়ম না মানার কারনে আপনি অসুস্থ হয়ে গেলেন, এতে কি হবে? এতে কিন্তু হাজারো রক্তদাতা রক্তদানে নিরুৎসাহিত হবে... প্রব্লেমটা কিন্তু রক্তদানে না, প্রব্লেমটা হল আপনার... কারন আপনি রক্তদানের নিয়ম মেনে চলেননি :)
তাহলে কি শিখলাম আমরা? রক্তদানের পর নেক্সট ২৪ ঘণ্টা প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে, খাওয়া দাওয়া পরিমান মত করতে হবে, এবং হার্ড ওয়ার্ক কম করতে হবে, সম্ভব হলে বিশ্রাম নিতে হবে :)
৪)
ক্রস ম্যাচিং এবং স্ক্রিনিং এর আগে রক্তদান করবেন না... কিছু কিছু সরকারি হাসপাতালে সময় বাঁচানোর জন্য রক্ত নেয়ার পুর্বে ক্রস ম্যাচিং, স্ক্রিনিং করে না... সেক্ষেত্রে অন্তত হিমোগ্লোবিন এবং ব্লাড প্রেশারটা জেনে নিবেন আগে... কারন হিমোগ্লোবিন কম থাকলে এবং ব্লাড প্রেশার নির্দিস্ট সীমার মধ্যে না থাকলে আপনি কিন্তু রক্তদান করতে পারবেন না... রক্তদানের পর পরই অসুস্থ বোধ করবেন, বমি হতে পারে... এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন... এতে কি হবে? এতে মানুষ ভাববে, রক্তদান করলে বুঝি এমন হয়... মানুষ নিরুৎসাহিত হবে... কিন্তু এটা কিন্তু রক্তদানের প্রব্লেম না, প্রব্লেম হল আপনার নিজের... কারন আপনি রক্তদানের নিয়ম মেনে চলেননি :)
তাহলে এখানে আমরা কি শিখলাম, হিমোগ্লোবিন এবং ব্লাড প্রেশার না জেনে কোনোভাবেই রক্তদান করা যাবে না :)
৫)
ওজন কম হলে রক্তদান করা যায় না... ছেলেদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ কেজি, মেয়েদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪৮ কেজি... কম ওজন নিয়ে রক্তদান করে অসুস্থ হয়ে গেলে মানুষ কিন্তু রক্তদানে নিরুৎসাহিত হয়ে যাবে :)
- - - - - - - - - -
উপরের নিয়মগুলো মেনে চললে আপনাকে ১০০% কনফার্ম করছি যে, আপনি নিয়মিতভাবে সুস্থ শরীরে রক্তদান করতে পারবেন... আপনার বোনম্যারো থাকবে আরো বেশি এক্টিভ... হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিকে জানাবেন 'টা-টা, বাই বাই' :D , শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাবে অনেকগুন বেড়ে... আর ৪ মাস পর পর ফ্রীতে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস), ম্যালেরিয়া - এইসব পরীক্ষা করে থাকবেন নীরোগ... :D
- - - - - - - - - -
খেয়াল রাখবেন, আপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারনে যেন হাজারো মানুষ রক্তদানে নিরুৎসাহিত না হয় :)

� হ্যাপি ব্লাড ডোনেটিং বাই ��স্বাধীন ইসলাম��

Comments

Popular posts from this blog

ফিঙ্গারিং

বাঁকা লিঙ্গ সোজা করার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ টিপস

☬ রক্তদানের ১৩০ টি স্লোগান ☬