আমিরাতের প্রাচীনতম ‘মাটির মসজিদ’


উইকএন্ড এলেই দূর পরবাসের কর্মব্যস্ত কাটখোট্টা খাঁচাবন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেতে মন উড়ুক্কু হয়ে উঠে।
আর সে নেশাতেই পিঠে ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়া কোন এক অজানাকে জানার কৌতূহলে দূর মরুর তেপান্তরে। আমিরাতের রাজধানী শহর আবুধাবি থেকে দুবাই শারজাহ হয়ে ফুজেইরাহ যেতে কমপক্ষে পাড়ি জমাতে হবে পাঁচ ঘণ্টার পথ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে যখন আপনি এগিয়ে চলবেন মনে হবে রাঙামাটির পাহাড়ে আপনি।
যাওয়ার সহজ ও সাশ্রয়ী পথ হলো আবুধাবি থেকে শারজাহের ট্যাক্সিক্যাব ধরে শারজাহ ট্যাক্সি স্টেশান থেকে ফুজেইরাহর বাস ধরা। যদি ফুজেইরাহ সিটিতে নামতে চান তাহলে আগেভাগেই সে প্রস্তুতি রাখবেন। নয়তো বাসটি আপনাকে সবশেষ স্টপেজ আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতের বন্দর খোর ফাক্কানে নিয়ে যাবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেবল দেড় শতাংশ ভূ-ভাগজুড়ে হাজার পর্বতশ্রেণির পাদদেশে এ অঙ্গরাজ্যের অবস্থান। আয়তন ৪৫০ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। একসময় এ ভূ-ভাগ ছিল প্রতিবেশি সালতানাত অব ওমানের অংশ। মূলত আবুধাবির ফেডারেল সরকারের অর্থে রাজ্যটির উন্নয়ন বাজেট চললেও ফুজেইরাহ মুক্ত বাণিজ্যের এলাকা। পাথর ভাঙা কারখানা, সিমেন্ট, খনিজ সম্পদ আহরণ, পর্যটন নির্মাণ শিল্প ও কৃষি এখানকার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
খুব ছোট অঙ্গরাজ্য ফুজেইরাহ। আমরা যাবো সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাচীনতম মসজিদ ‘আল বিদিয়া মসজিদ’ দেখতে। ফুজেইরাহ সিটি সেন্টার ছেড়ে গালফ অব ওমান উপকূল ধরে শারজাহর খোর ফাক্কান পার হলেই বিদিয়া। বিদিয়ায় বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র ব্যবসা, নির্মাণ ও সেবা খাতে বাংলাদেশিদের ভালো অবস্থান আছে। এই বিদিয়ায় রয়েছে আমিরাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ ‘আল বিদিয়া মসজিদ’।
এ ঐতিহাসিক মসজিদটির নির্মাতা কে এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তবে এ এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালানোর সময় এখানে প্রাচীন জনবসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে এ খননকাজ চালানোর সময় ধারণা করা হয়েছিল যে বিদিয়া মসজিদ ১৪৪৬ থেকে ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল।
তখন মসজিদের আশপাশে পাওয়া মাটির পাত্র ও চীনামাটির ধ্বংসাবশেষও ছিল ষোড়শ শতকের। এ সময় পর্তুগিজরা আরব সাগরে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো। পর্তুগিজ ইতিহাসেও বিদিয়া এলাকায় দুর্গ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের কথা উল্লেখ আছে।
এদিকে কিছুদিন আগে ফুজেইরাহ সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত আর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় মসজিদের নির্মাণকাজে ব্যবহার করা কোরাল ব্লক পরীক্ষা করে মসজিদের নির্মাণকাল ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দ বলে ঠিক করা হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে মসজিদটি ‘বিদিয়ার মাটির মসজিদ’ নামে পরিচিত। মসজিদটি নির্মাণে কোরাল ব্লক বা পাথরখণ্ড ও কাদামাটি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের আয়তন ৫০ বর্গমিটার। কয়েক প্রজন্ম আগেও মসজিদ এলাকায় কোন জনবসতি ছিল না। মসজিদে ঢোকার শুধু একটি দরজা ও চারটি খাড়া গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ছাদ ও গম্বুজের ভার বইতে মাঝ বরাবর রয়েছে একটি স্তম্ভ। এর ভেতরে ছোট মিহরাব ও মিনারও রয়েছে।
দেয়ালের কোটরে কোরআন শরীফ রাখার জায়গা করা আছে। মসজিদের ভেতরের অংশ ঠাণ্ডা রাখার জন্য দেয়ালের বিভিন্ন অংশে বাতাস চলাচলের পথ বা ছিদ্র রয়েছে। মসজিদের চারধারে রয়েছে উঁচু মাটির প্রাচীর, বাইরে বসানো আছে কুয়া। পাথুরে পাহাড়ের এ বিরান জনপদে মসজিদকে ঘিরে গড়ে তোলা নানা প্রজাতির ক্যাকটাস, গাছ-গাছালির সারি আর পাখির কুজন যেন একটা স্বস্তি বয়ে আনে পথচারী ও পর্যটকদের মনে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনেকেই এখানে এলে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। মসজিদের পেছনের দিকে পাহাড়ের গায়ে দু’শতাধিক বছর আগে পর্তুগিজদের তৈরি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
২০০৩ সালে ঐতিহাসিক মসজিদটির সংস্কার ও পরিবর্ধন কাজ শেষে ফুজেইরাহর শাসক শেখ হামাদ বিন মোহাম্মদ আল শারকি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

Comments

Popular posts from this blog

ফিঙ্গারিং

বাঁকা লিঙ্গ সোজা করার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ টিপস

☬ রক্তদানের ১৩০ টি স্লোগান ☬