আমি এবং একজন অসহায় মা।


আমি এবং একজন অসহায় মা
.
.
.
-বাবা তোমার নাম কি আরিফ?
.
আমি প্রশ্নটা শুনে মহিলার দিকে ভ্রু
কুচকে তাকালাম,কারণ আমি আরিফ নই।
আমি দাড়িয়েছিলাম
ফুটপাতে,যেখানে
অনেকে বসে বা শুয়ে থাকে।মহিলা
অবশ্য
বসে আছেন। ওনার সামনে একটা
প্লেট,সম্ভবত উনি ভিক্ষা করেন।
বয়স আর কত?ষাট সত্তর হবে।
চুল সব পাকা, গায়ের পরনের শাড়ি
ব্লাউজের অবস্থা খুব একটা সমীচিন
নয়,অনেক জায়গায় ফাটা।
.
৫ মিনিট হয় এখানে এসে
দাড়িয়েছি,কারণ
জায়গাটায় রোদ কম।এক ফ্রেন্ডের জন্য
অপেক্ষা করছিলাম।
এখানে আসা থেকেই দেখছি এই
মহিলা
আমার দিকে চোখ বড় বড় করে
তাকিয়ে
আছেন । সম্ভবত আমাকে মনে হয় ওনার
পরিচিত কারো মত লাগছে, তাই হয়ত এই
প্রশ্ন করেছেন।
.
মহিলা আবার বললেন ,
-তুমি কি আরিফ উদ্দীন?
-না আমি আরিফ নই,
-ও, তুমি একদম আরিফের মত।
-আরিফ কে হয় আপনার?
-আমার ছেলের নাম আরিফ,ঠিক তুমি
আরিফের মত দেখতে।
.
আমি মহিলার কথা শুনে ওনার দিকে
কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম, ঢাকা শহরে
অনেক মহিলা অবশ্য এমন করে যে
কাওকে
নিজের ছেলের মত দাবী করে
সহানুভূতি
হিসেবে টাকা পয়সা নেয়।
কিন্তু এই মহিলাকে দেখে মনে হচ্ছে
না
উনি মিথ্যা কথা বলছেন।
.
উনি আমার মনের কথাটা হয়ত বুঝলেন
তাই
বললেন,
-তোমার মনে হইতাছে মিথ্যা
কইতাছি,,
না সত্য কথা !
.
উনি ওনার পাশে রাখা পুটলি হাতরে
একটা
ছবি বের করে আমার দিকে এগিয়ে
দিয়ে
বললেন,
-এটা আমার পোলা আরিফ।
.
আমি ছবিটার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য
হলাম। পুরো আমার মত দেখতে
আরিফ,কিন্তু আমি আরিফ না আমি
মোতালিব।আরিফের গালে একটু
গোস্ত
বেশি আমার গালে কম এই যা পার্থক্য।
.
আমি মহিলার হাতে ছবি টা ফেরত
দিতে
দিতে বললাম,
-আপনার ছেলে কি হারায় গেছে
চাচী?
-হুম,ঢাকায় আমারে নিয়া ঘুরতে
আইছিলো।
এক জায়গায় রাইখা কইলো ও একটু
আইতেছে।
.
এটুকু বলেই মহিলা কাঁদতে শুরু করল।
আমি বললাম,
-তারপর?
-আর ফিইরা আইলোনা আরিফ,
-ও, বেটার বিয়া দিছিলেন?
-হুম,ভাল মাইয়া দিয়া বিয়া
দিছিলাম।
আরিফ ভাল পোলা, স্কুল মাষ্টার
বানাইছিলাম।
-ও,আপনার ব্যাটা আপনারে ফালাই
থুয়া
গেছে
-না আরিফ ভাল।
এটা বলে আবার কাঁদতে শুরু করলেন।
.
মহিলার ছেলের প্রতি ভালবাসা
দেখে
কিছুটা অবাক হলাম।উনি জানেন
আরিফ
ওনারে ফেলে চলে গেছে তবুও আমার
কাছে
নিজের ছেলেকে ছোট করলেন না।
.
মহিলাকে অসুস্থ লাগছে।মনে না হয় না
খেয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-কিছু খাবেন চাচি?
-হুম,,কাল রাত থাইকা খাইনা,কেউ
ভিক্ষাও দেয়না।
-চলেন,কিছু খাওয়াইয়া আনি
আপনারে।
যতই হোক আরিফ আর আমার চেহারার
মিল
আছে।
.
উনি ঠিকভাবে হাটতে পারলেন
না,আমি
ধরে ধরে নিয়ে গেলাম
হোটেলে,রাস্তার
পাশেই এক কম দামী হোটেল এ। বেশি
দামী হোটেলে ওনাকে বসানোর মত
সামর্থ্য আমার নাই। দুইটা পরেটা আর
একটা ডিম ভাজি অর্ডার দিলাম।
.
খাওয়ার সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-আর কিছু মনে নাই আপনার, কোন
জায়গায়
বাড়ি,কোন গ্রাম?
-না বাবা,খালি আরিফের নাম মনে
আছে।
.
মায়েরা কি অদ্ভুত জাত তাই না??
.
পৃথিবীর সব কিছু ভুলে গেছেন শুধু মনে
রেখেছেন ওনার ছেলের নাম ,যে
ছেলেটা
ওনাকে এই অন্ধকার শহরে ফেলে চলে
গেছে।
ছেলেটার মনে প্রশ্ন জাগেনি তার
সত্তরোর্ধ মা কে দেখবে কে???
.
সন্তানেরা এমনি হয়, না ভেবেই কাজ
করে।
মহিলা কে মা বলে ডাকতে ইচ্ছে
করছে
কিন্তু ডাকলাম না,মায়া বাড়াতে
চাইনা।
.
সামর্থ্য থাকলে হয়ত ওনাকে আমার
সাথে
নিয়ে যেতাম,সেটুকু নেই।
তবে ওনার ছেলে হিসেবে এক বেলা
খাইয়ে
দিয়েছি, জানি এটা কিছুই নয় তবুও কি
বা
করার থাকে আমাদের হাতে।
.
আমি ওনাকে আগের জায়গায় বসিয়ে
দিয়ে
বললাম,
-থাকেন চাচী,আমি যাই।
.
আমি যখন উঠব তখন উনি আমার পা ধরে
ফেললেন।আমি আবার বসে পড়লাম,
-কিছু বলবেন চাচী।
.
দেখলাম ওনার চোখে পানি, উনি
চোখের
পানি না মুছেই বললেন,
-আরিফের সাথে দেখা হইলে ওরে
আসতে
বলিও বাবা,,খুব শীত লাগে রাইতে
রাস্তায়।
-হুম,,,বলব।
-আরো বইল,ওরে জড়াই ধইরা ঘুমাইতাম ওর
ঠান্ডা লাগত বইলা, আর আরিফ এখন আর
আমার খোঁজ ও নেয়না।
.
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে
পারলাম
না, চোখ দিয়ে এমনি এমনি পানি
পড়তে
শুরু করল।..
আমার চোখের পানি দেখে উনি
আমার
মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-বেটা মানুষ কান্দে না বাবা,বেটা
মানুষ
কান্দেনা।বেটা রা পুরুষের জাত।
.
না মা সব বেটা পুরুষের জাত
নয়,আরিফের
মত কিছু ব্যাটা আছে যারা কাপুরুষের
জাত।
আমি আর ওখানে বসে রইলাম না,
পকেটের
দুইটা একশ টাকার নোট ছিল ওনার
হাতে
দিয়ে উঠে পড়লাম।আরিফকে খুজতে
হবে।
এক মাকে দেওয়া কথা রাখতে হবে ।

Comments

Popular posts from this blog

ফিঙ্গারিং

বাঁকা লিঙ্গ সোজা করার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ টিপস

☬ রক্তদানের ১৩০ টি স্লোগান ☬