কলমের ছোঁয়া না পাওয়া চিঠিগুলি-১
তুমি কেমন আছো?
খুব জানতে ইচ্ছা করে।
হয়তো ভালোই আছে।অন্তত আমার মতো বিরহ বিলাপে নেই তুমি।আমাকে তুমি কবেই ভুলে গেছো কে জানে।আমি যে কেন তোমাকে মনে রাখি জানিনা।ভালবাসার জন্য হয়তো।অল্পকিছুদের কাছে থাকায় তুমি ভালবাসার যে গভীর অভিনয় করেছিলে,আমি ততোটাই গভীর ভালবেসেছিলাম।
আমি একটাবারও ভাবিনি কখনো আমাদের মাঝে এতো দূরত্ব হবে।
তুমি অন্য কারো আর আমি এখনো তোমার!
ভালবাসা বোধহয় একেই বলে।আসলে পবিত্র ভালবাসার সংজ্ঞাটাই এমন।কাছে বা দূরে ভালবাসাটা সবসময় একই থাকে।
আমার এখনো মনে পড়ে সেইসব দিনগুলি।তুমি হয়তো ভুলে গেছো!তোমার সাথে সম্পর্কের শুরুর দিকটাতে আমি চরম বোকা ছিলাম,তোমার সামনে দাঁড়ালেই হাঁটু কাঁপতো,বুক কাঁপতো আর অস্থির অস্থির লাগতো।
নিজেকে পরিপূর্ণ প্রেমিক তখনো করতে পারিনি ।আসলে সত্যিকার ভালবাসা তো তুমিই,আমার জীবনের প্রথম ভালবাসাটা তুমিই ।তোমার প্রেমে পড়ার পর আমার জীবনটা সম্পর্ণ বদলে যায় ।চিন্তাভাবনার সরল পথ বেঁকে যায় !
একসময় মনে হতো,
তুমি আমাকে যতোটা ভালবাসো আমি তার সিঁকিভাগও তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারিনা !
তোমার মেকি ভালবাসাটাকে আমি দিনের পর দিন সত্যি ভেবে কত পুলকিত হয়েছি ! নিজেকে ধন্য ভেবেছি !
তোমাকে চাওয়ার প্রার্থনাগুলি অনেক পুরোনো আর দীর্ঘ ছিল ।
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তোমার কি একবারও মনে হয়নি-
এটা অন্যায়,চরম অপরাধ,একজনের বিশ্বাস প্রতি এ প্রকট অত্যাচার করেছো তুমি !
একবারও কি ফিরে আসতে ইচ্ছে করেনি কখনো !
হয়তো করেনি !
এর জন্য আমি তোমাকে দোষ দিবো না ।
এখনকার মেয়েগুলি এমনই,
সত্যিকার ভালবাসাগুলিকে এরা যত্ন করেনা আর দিনের পর দিন মিথ্যে ভালবাসায় নিজেদের সঁপে দেয় !
দামী জিনিসকে ভালবাসায় সংজ্ঞায় বেঁধে ফেলে !
আমার মতো মধ্যবিত্ত যুবকদের তরুণীরা খেলার সামগ্রী হিসেবেই পছন্দ করে ।পুরুষ নিয়ে ছলনা করার খেলাটা নারীর অনেক পুরোনো স্বভাব ।
বাইবেলে পড়েছিলাম,
আমাদের মাতা ইভ শয়তানের ছলনায় পড়ে নিতান্ত ভাল মানুষ এডামকে ছলচাতুরী করিয়ে নিষিদ্ধ কাজ করেছিল !
সেই থেকেই শুরু নারীর ছলনা ।
আমিও তার স্বীকার ।অবাক হই এটা ভেবে যে,আমার সাথে ছলনা করা মেয়েটা তুমি ! যাকে জীবনের সবচেয়ে বেশি আপন ভেবেছিলাম :'(
একজন নারীর অভাব আমার জীবনে প্রকট ।
আমি খুব ছোটবেলায় মা হারিয়েছি !
একা ঘুমাতে পারতাম না ।
আপার কাছে ঘুমাতাম !
যখন ক্লাস থ্রি'তে পড়ি আমার আপার বিয়ে হয়ে যায় !
সেই থেকে আমি একা ।
অনেকটা বছর নিঃসঙ্গতায় কাটিয়েছি !
সবসময় বিশ্বাস করতাম,
একটা সত্যিকার নারী আমার জীবনে আবার আসবে !
তোমাকে যতোটা প্রেমিকা ভাবতাম তার থেকে বেশি ভেবেছি আত্মার সঙ্গী হিসেবে !
তুমি একাকীত্ব জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মুখ ছিলে ।
তোমাকে পেয়ে আমার জীবনের সমস্ত অপূর্ণতা ঘুঁচে গিয়েছিল ।
সেই তুমিও একদিন চলে যাবে বুঝতে পারিনি রূপা ।
সেই ক্লাস থ্রি তে মায়ের মতো আপা হারানোর বেদনায় কেঁদেছিলাম,তারপর দীর্ঘসময় পর তোমাকে হারানোর বেদনায় কেঁদেছি ।সেই বেদনা অনেক আগেই কাটিয়ে শক্ত হলেও তোমাকে হারানোর বেদনাটা এখনো প্রকটভাবে যন্ত্রণা দেয় আমাকে ।
না গেলে কি হতোনা রূপা ?
না হয় থাকতেই আমার হয়ে ।
এই গোবেচোরা বোকাটাকে না হয় আঁচলেই বেঁধে রাখতে ।
চলেই যদি যাবে আসছিলে কেন !
এতো বড় জগতে আমাকেই কেন বেছে নিয়েছিলে এমনভাবে ভালবাসতে ?
তুমি কি জানতেনা আমি সবার মতো প্রেমিক নই ?
আমি কত সাধারন তা কি জানতে না ?
জানতেনা আমার ভালবাসাটা সবার থেকে আলাদা ?
জানতেনা তুমিই প্রথম ভালবাসা ?
আমার কি দেখে তুমি আমায় ভালবেসেছিলে !
ও সরি,ভালো তো বাসোনি,টাইম পাস করেছো ।টেস্ট করে দেখেছো বোকা ছেলেদের প্রেম কেমন হয়,তাইনা ?
দেখা হয়ে গেছে,তাই চলে গেছো জানি ।
কিন্তু আমি !
আমি তো তোমার সাথে সময় কাটায়নি,তোমাকে টেস্ট করতে চাইনি ।নিতান্ত সাধারন একজন প্রেমিক হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম ।
একজন সত্যিকার প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম ।
কত ভালবাসা দেইনি তোমাকে !
ভালবাসতে পারিনি তোমাকে এখনো ।শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিয়ে চলে গেছো তুমি ।
চলে গিয়ে ভাল আছো তাতেই ভাল ।আমার থেকে যদি কেউ ভালবাসে তবে ভাল ।তবে সেটা যেনো ভালবাসা হয়,অন্যকিছু যেনো না হয় এই কামনা করি সমসময় ।
আসলে,সত্যিকার ভালবাসাটা আমরা কখনোই বুঝতে পারিনা ।অযত্ন আর অবহেলায় দূরত্ব তৈরি হয় ।
জানো রূপা,
আবার একদিন আমাকে তোমার মনে পড়বে,কোন এক পিচঢালা রাঁস্তায় আমাদের দেখা হবে ।সেদিন খালি পায়ে,হলদে পান্জাবীর এই মানুষটাকে কি এড়িয়ে যাবে তুমি ?
নাকি দূর থেকে দেখেই ডাক দিবে,এই আবিদ অথবা এই হিমু...
তারপর কি আমাকে ভালবাসবে ?
আমি তো হুমায়ূনের কাগজের পাতায় লেখা অক্ষরের কোন হিমু না,সে রক্তমাংসহীন অক্ষর !
আর আমি তো রক্ত মাংসের সত্যিকার হিমু ।অক্ষরের হিমু ভালবাসতে পারেনা কিন্তু আমি পারি ।
প্রখর রোদের দুপুরে তোমায় নিয়ে রাঁস্তার পাশে ডাবের পানি খেতে পারি,
বসন্তের কোকিলের মতো গান শোনাতে পারি,
বাদল ধারায় তোমার হাতটি ধরে কদম তলায় ভিজতে পারি,
আঙুলে আঙুল রেখে হেঁটে যেতে পারি বহুদূর তারপর তোমার খোঁপাতে বেলিফুলের মালা গেঁথে দিতে পারি,তোমার চুলগুলিতে বিলি কেটে দিতে পারি,তোমার বাকাঁনো টিপ ঠিক করে দিতে পারি,তোমার নাকফুল,কানের দুল অথবা তোমার চোখের পাঁপড়ি ছুঁয়ে দিতে পারি ।
কিন্তু কখনোই তোমার শরীর ছুঁয়ে দেখতে পারবোনা ।তোমার পোশাকের আড়ালে থাকা অংশগুলি আমার ভালবাসার আমানত,ওগুলি আমার জোছনারাতের ছন্দ,ঘোর বর্ষায় আমার কবিতা,হেমন্তের সকালে আমার প্রথম প্রার্থনা ।
খুব ইচ্ছে ছিল তোমাকে বিয়ে করার ।একটা নীল শাড়ি কিনে দেওয়ার খুব ইচ্ছা তোমার ।একগুচ্ছ বেলিফুল হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নীল শাড়ির তোমাকে নিয়ে কাজী অফিসে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল ।
তারপর একদিন ধুমধাম করে লাল রঙের পরীটাকে বউ করে ঘরে তোলার বড্ড ইচ্ছা ছিল ।
মানুষের জীবনের সব ইচ্ছা হয়না পূরণ হয়না জানি ।কিন্তু কারো কারো তো হয় ।আমার কি দোষ রূপা ?
নির্ভেজাল,নিঁখুত আমার পবিত্র ইচ্ছাগুলি কেন অঙ্কুরেই বিনাশ হলো !
নাকি এ আমার ক্রান্তিকাল ভালবাসার !
নাকি এ আমার প্রেমের খাঁটিত্ব!
নাকি ভালবাসা আমাকে সুখ দিবে বলেই দুঃখ দেয়!
জানিনা কিছু শুধু ভাল থাকো তুমি... :'(
ইতি-
তোমার পাগলটা...।।
Comments
Post a Comment