পিতার কাছে একটি চিঠি।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী,বাঙালী জাতির জনক,
বাঙালীর প্রাণের বঙ্গবন্ধু,
আমার প্রাণপ্রিয় পিতা,
কেমন আছো পিতা ?
জানি একটুকু রাগ নেই তোমার আমাদের প্রতি,এতোটুকু অভিশাপ তুমি আমাদের দাওনি,
সন্তানের প্রতি পিতার কি কোন অভিযোগ থাকতে পারে !
পিতা,
তবুও তো আমরা ভাল নেই ।তোমাকে হত্যার দায়ে সময় আমাদের অভিশপ্ত করে দিয়েছে,
কি এক বিক্ষিপ্ত হাহাকারের একটা জাতি আমরা হয়ে গেছি,
তুমি থাকলে হয়তো ইতিহাসটা অন্যরকম হতো পিতা ।সে সুযোগ আর কৈ পেলে,
নিজের সন্তানদের হাতেই তোমাকে মরতে হয়েছে !
আমাদের ক্ষমা চাওয়ার মুখটাও তো নেই ।
প্রিয় পিতা,
তুমি যে দেশটা রেখে গিয়েছিল সেটা অনেক বদলে গেছে ।
তোমার সোনার বাংলায় একসময় রাজাকারের রাজত্ব চলেছিল,
রাজাকারদের গাড়িতে তোমার প্রিয় লাল সবুজের পতাকা তুলে দিয়েছিল অপশক্তিরা,
তোমার অনুপস্থিতিতে জামায়াতের মতো একটা চিহ্নিত রাজাকার গোষ্ঠী এই দেশে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে পিতা !
পিতা লজ্জার কথা শুনবে তুমি পিতা,শুনবে-
তোমার মৃত্যুর পর আওয়ামী,বিএনপি সবাই রাজাকারদের পাও চেটেছিল !
তোমার রক্ত গায়ে আছে বলেই হয়তো একদিন শেখ হাসিনার সুবুদ্ধির উদয় হয়েছিল,
রাজাকারদের তিনিই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন ।
তবুও পিতা,লজ্জার কথা আর কি শোনাবো তোমাকে-
এই দেশেতে রাজাকারদের বাঁচাতে রাজপথে মিছিল হয়,হরতালে মানুষ মরে,রাজাকারদের আইনজীবীও থাকে,রাজাকাররা ক্ষমাও চাইতে পারে !
সবই তোমার মৃত্যুর কুপ্রভাব পিতা ।
তুমি থাকলে হয়তো এতোকিছু হতোনা,খুব দরকার ছিল তোমার থাকাটা পিতা,ওরা তোমাকে থাকতে দেয়নি,তাইনা পিতা ?
জানো পিতা জানো,
তোমার প্রিয় হাসুটা,
ওদেরও বিচার করেছে ।
প্রিয় পিতা,
আমাদের ভাইজান কেমন আছে ?
রাসেল ভাইজানের কথা বলছি।
আমাদের ভাইজানই তো,
তবুও তাকে রাসেল ডাকতে হয় !
৮ বছরেই বেঁধে গেছে তাঁর বয়স !
আহা তাঁর কাঁন্নায় এখনো কাঁদে বাংলাদেশ,এখনো আগস্ট এলে আকাশ সব বাঁধ ভেঙ্গে দেয়,
রাসেলের কাঁন্না অভিশাপ হয়ে আমাদের ডুবিয়ে দেয় পিতা !
তোমার রেখে যাওয়া আদর্শ অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে
পিতা !
মুজিব কোর্ট গায়ে দিয়ে নেতারা পাজেরোতে দোল খায়,
রহিম-করিমদের কথা কেউ মনে রাখেনা পিতা,
কৃষকদের কথা কেউ ভাবেনা,
কেউ বলেনা,কৃষকরা এ জাতির মেরুদন্ড,ওদের বাঁচাও !
শুনবে পিতা কষ্টের কথা,
ঈদ পার্বণে কৃষকদের চুলায় অনেক কষ্টের ঘাম রাঁন্না হয় !
আর তোমার আদর্শের নেতা দাবি করা মানুষগুলির উত্‍সব কে বা দ্যাখে !
কি একটা অস্বস্তিকর জাতি হয়ে গেছি আমরা পিতা ।
আকাশের তারা,প্রভাতের সূর্য,বর্ষার বৃষ্টি,রাতের জোছনা অথবা ঝিঁঝিঁপোকা কিংবা কৃষকদের কাঁধের গামছা হয়েও কি একবার এসে দেখে যেতে পারোনা পিতা আমাদের ?
তোমাকে বিভক্ত করেছে ওরা,
তোমাকে জাতীয়করণ না করে দলীয়করণ করেছে সবাই ।
পিতা দুঃখেয় কথা তোমাকে বলতে লজ্জা হয় পিতা,
জয় বাংলার সৈনিকরা এখন বিভক্ত হয়ে গেছে,
ঐক্যবদ্ধ নেই তোমার সন্তানেরা ।
আওয়ামী-বিএনপি নামে ভাগ হয়ে গেছে জাতি !
আর বুকে এখনো পাকিস্তান ধারণকারীরা গিয়ে জমেছে জামায়াতের দলে ।

তোমার দলের সৈনিকরা নেই পিতা !
জয় বাংলা বলা নেতারা তোমার নাম বেঁচে পেট চালায়,
তুমি এখন একটা ব্যবসা পিতা,
তোমার মৃত্যুর শোক ঢেকে যায় নেতাদের সুখ পোস্টার,ব্যানার আর ফেস্টুনে !
জয় বাংলা বলে চিত্‍কার করা ঐ ছাত্রলীগের সেই ঐতিহ্য কৈ
পিতা ?
৮৮,৯৮ এর বন্যায় গরীব অসহায়দের পাশে ছিল যে ছাত্রলীগ এখন তারা কোথায় পিতা ?
উত্তরে ভয়ংকর বন্যা আর এদিকে তারা নেতাদের পোস্টার লাগায় !
কত অবক্ষয় আর শুনবে পিতা ?
তুমি প্রথম দৃঢ়কন্ঠে ইন্ধিরাকে বলেছিলে,
"আমার দেশ থেকে তোমাদের সৈন্য নিয়ে যাও"
তুমি রক্ত দিয়ে যে সীমান্ত গেঁথে দিয়ে গেছিলা না ?
সেখানে এখনো রক্ত ঝরে,
ফেলানীদের লাশ ঝুলে থাকে কাঁটাতারে ।
কেউ তোমার মতো দৃঢ়কন্ঠে প্রতিবাদ করেনা পিতা,
পতাকা বৈঠক করে তারা ফিরে আসে ।
পিতা ওরা ভয় পায় অত্যাচারীদের !
তোমার মতো প্রতিরোধ ওরা করেনা পিতা ।
এ দেশে তোমার পথভ্রষ্ট সন্তানেরা ভরে যাচ্ছে পিতা ।
যে ভাষার জন্য তুমি জীবনে প্রথম জেল খেটেছিল সে ভাষার প্রতি প্রজন্ম এখন ভালবাসা দেখায়না,
যে জাতির সিনেমা দেখা তুমিই নিষিদ্ধ করে গিয়েছিল,তা এখন অহরহ চলছে এ দেশে,
অনেক আগেই দেশ গোল্লায় গেছে পিতা ।
তোমার হাসু সব সামলাতে পারলেও একটা উন্নত প্রজন্ম তৈরিতে ব্যর্থ পিতা ।
হাতে হাতে মোবাইল,ইন্টারনেট,পটর পটর ইংরেজী বলা দেখে তোমার হাসু ভাবছে যে প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে ।
আসলে তো ওরা পিছিয়ে যাচ্ছে,
নৈতিকতা,চরিত্র,শিষ্টাচার,দেশপ্রেম কিছুই নেই ওদের মাঝে ।
পিতা তোমার হাসুর চোখে একটু স্বপ্ন হয়ে এসে তাকে বলে যেও,
সংস্কৃতি বাঁচাতে হবে ।
সংস্কৃতি বাঁচাতে দরকার হলে ধর্মের প্রভাব কমাতে হবে ।
যে দেশে সংস্কৃতির থেকে ধর্মের প্রভাব প্রকট সে দেশের উন্নতি হয়না-
এই কথাটা একটু বলে যেও পিতা ।
অনেক বড় চিঠি লিখে ফেলেছি পিতা,
জানি এ চিঠি তোমার কাছে পৌছাবেনা,
এই বাতাস,আকাশ কিছুই আর তোমার নেই ।
সবাই তোমার নাম বেঁচে খায়,
জয় বাংলা বলা পাতি নেতাদের সামান্যতম রাজনৈতিক জ্ঞানটাও নেই তারা নাকি তোমার আদর্শের সৈনিক !
তোমার মৃত্যুর দিনটাও এরা ফুরফুরে হলিডে বানিয়ে ফেলেছে,
পাবলিক প্লেস,পার্ক,হোটেলে রঙ বেরঙের উত্‍সব চলে ।

জানি এ চিঠির উত্তর পাবোনা কোনদিন ।অভিমানে হয়তো এ চিঠি তুমি পড়বেওনা ।
আমাদের ক্ষমা করা যায়না পিতা ?
পিতা কথা দিচ্ছি তোমাকে,
তোমার সোনার বাংলাদেশ গড়বোই ।তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বো ।
শুধু তুমি দূর থেকে আমাদের দোয়া করো পিতা ।
তোমার সব সন্তান পথভ্রষ্ট হয়ে যায়নি পিতা,তোমার কিছু সন্তান এখনো লাল সবুজের পথে আছে,
ওরাই তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বে পিতা ।
আজ তবে রাখি পিতা ।
যেখানেই থাকো ভাল থাকো ।
ইতি-
তোমার আদর্শের সৈনিকেরা,
জয় বাংলার বাহকেরা,
লাল সবুজের প্রতিকেরা-
তোমার প্রিয় সন্তানেরা ।।

আমি লজ্জিত পিতা !