যে চিঠি কোনদিন পৌছাবেনা গন্তব্যে-২
রূপা,
ভাল আছো তুমি,তাইনা ?
ভাল থাকার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছো,ভাল তো থাকবেই ।
নতুন স্বপ্ন,নতুন পথ-কত ভাল আছো তুমি ।
একা আমিই ভাল থাকতে পারিনি ।বিরহ ব্যথা,তোমার তীব্র শূণ্যতা আমাকে পুড়াচ্ছে ভীষণ ।
ভাল লাগেনা কিছু রূপা ।
দিনটা এদিক সেদিক ঘুরে পার করে দিতে পারি,রাতে যখন রুমে এসে লাইটটা বন্ধ করে বালিশে মাথা দেই তখন বুকের ভেতরটা খুব হাহাকার করে রূপা,তোমাকে ভীষণ অনুভব করি,প্রচন্ড ইচ্ছা করে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করতে !
আজ কতটা দিন তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করছোনা,
ভাল থাকলে কে বা অতীত মনে রাখে ।আমি ভালো নেই বলেই তোমাকে মনে পড়ে,তাইনা ?
আমি আসলে ভাল থাকতে চাইনা রূপা ।ভাল থাকার মতো সবকিছু আমার আছে,শুধু তুমি নেই ।শুধু তোমার না থাকা আমার সমস্ত ভাল থাকাকে মলিন করে দিয়েছে ।ভীষণ ভালবাসি তোকে।
জানিনা কেমন করে ভুলে থাকো আমাকে ।
আমাকে ভুলেই যদি থাকবে নিজেকে এতোটা কাছে এনেছিলে কেন আমার ?
তোমাকে কত ভালবাসা দিলাম,কত যত্নে অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নিলাম,
আজীবনের জন্য মগজে গেঁথে নিলাম,একটার পর একটা স্বপ্ন গেঁথে সুখের দিনে আশায় থেকেছি-সেই তুমি আজ কোথায় ?
তোমাকে কত বিশুদ্ধভাবে ভালবেসেছি তা শুধু আমি জানি ।তোমার জানার ক্ষমতা নেই-এখন বড্ড বুঝি সব ।তখন বুঝিনি ।নিঁখুতভাবে অভিনয় করে গেছো নীরবে !
কি দরকার ছিল রূপা অভিনয়ের ?
এই পৃথিবীতে কত ছেলে আছে,আমার মতো একটা ছাইপাশ ছেলেকে কেন অভিনয়ের জন্য বেছে নিতে হলো তোমার !
আমি তোমাকে সত্যিকার ভালবেসেছি-এটাই কি তবে আমার একমাত্র ভুল রূপা ?
তবে এই ভুলতো তুমিও করেছো !
আমাকে ভীষণভাবে ভালবেসেছো তুমি ।
আমি জানি তার সবটা অভিনয় ছিলনা ।আমাকে দেওয়া সময়গুলি কোনদিন প্রতারণা হতে পারেনা প্রিয়তমা ।আমার বিশ্বাস হয়না,এতোবড় অবিশ্বাস আমি করতে পারবো না।
তুমি যেদিন আমার হাত থেকে রক্ত রাঙা পাঁচটা গোলাপ নিয়েছিলে,আমি সেদিন ভেবেছিলাম-এই সম্পর্ক কোনদিন বিরহ জ্বালায় ধুঁকে ধুঁকে শেষ হবেনা ।
ভালবাসাটা আমারি বেশি ছিল,কষ্টটা তাই আমারি বেশি ।
আমার হৃদয় জুড়ে এখনো তোমার আনাগোনা,আমার স্বপ্নে এখনো তোমার একচ্ছত্র শাসন,আমার কবিতার পঙতি,আমার সমস্ত ভালবাসার সংজ্ঞায় এখনো তোমার একক দখলদারিত্ব আছে প্রিয়তমা ।
শুধু তুমি নেই ।
আমাকে ভীষণভাবে ঠকিয়ে চলে গেছো তুমি।
সুখে থাকতে চলে গেছো,ভাল থাকতে ।
আমার সমস্ত ভালবাসা এখনো আত্মিক,সমস্ত জাগতিক চিন্তার উর্ধ্বে !
তোমার মায়াবী চোখকে মায়ার কালো দীঘি ভেবেছি,কখনো ভাল করে তাকাতে পারিনি ।
তোমার সুগঠিত স্তন দুটিকে হিমালয় পর্বত ভেবেছি,
অবৈধভাবে তাকে কখনো জয় করতে চাইনি,
তোমার কোমড়কে ঢেউ তোলা নদী ভেবে কখনো সাঁতার কাঁটিনি,সবকিছু পবিত্রতায় না বেঁধে আমি ডুবতে চাইনি ।
আমি যে বিবেকের কাছে চিরদিন বিশুদ্ধ থাকতে চেয়েছি,তোমাকে বিশুদ্ধ রাখতে চেয়েছি-কখনো যদি একটু বুঝতাম সেটাই ছিল আমার ভুল ।বিশ্বাস করো,এতো প্রকটভাবে তোমাকে ভালবাসতে যেতাম না ।
আমার কোনদিন বিশ্বাস হতোনা,তুমি অবিশ্বাসী হয়ে দূরে সরে যাবে । এখনো বিশ্বাস হয়না রূপা ।তোমাকে অবিশ্বাস করতে পারিনা কোনভাবেই ।সমসময় শুধু মনে হয়,আমার কাছে আবার ফিরবে ।এই ছাইপাশ ছেলেটাকে নিয়ে কদম,বেলীতে ভালবাসা খুঁজবে !
চলে যাওয়ার আগে তুমি প্রায়ই বলতে আমি তোমার অযোগ্য !
হয়তো তাই ।
আমিও এখন প্রায়ই ভাবি,তুমি ফিরে না আসার একটাই কারন থাকতে পারে,আমি তোমার অযোগ্য ।
সত্যিই তো,আমি তো বাংলা সিনেমার পুরোনো নায়কদের মতো একজন,
আমি তো জীবনানন্দের মতো উদাসী একজন,
আমি তো সক্রেটিসের মতো সবচেয়ে সুন্দর পথের পথিক-
আমি কেমন করে তোমার যোগ্য হবো !
তোমাদের তো পশ্চিমা আর ভারতীয় ধাঁচের ছেলে বেশি পছন্দ ।মানিব্যাগ ভরা টাকা,বাইক,দামি সানগ্লাস তোমাদের ভীষণ প্রিয় ।আমার ওসব নেই ।কোনদিন ওসব বানানোর ইচ্ছাও নেই ।আমি ছাইপাশ নায়ক ই থেকে যাবো চিরদিন ।
উত্তপ্ত দুপুরে আমি তোমাকে কোন হোটেলে নিয়ে লাঞ্চ করাতে পারবো না কোনদিন,কিন্তু কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ডাবওয়ালার সাথে গল্প করতে করতে তোমাকে ডাবের পানি খাওয়াতে পারবো ।
এতে তোমার চলবে না জানি ।
তাই ইচ্ছা করলেও এখন আর তোমাকে ডিস্টার্ব করিনা ।
তোমার নাম্বারে মেসেজ,কল দিতে গিয়েও থেমে যাই ।বুকের ভিতর ভীষণ ভাঙচুর চলে তখন ।তোমাকে ভালবাসার অযোগ্য কেন করলো প্রকৃতি আমাকে !
কেন আমাদের চিন্তাগুলি এক হলোনা !
নিজেকে প্রায়ই ব্যর্থ মনে হয় ।
ছাইপাশ জীবনটা ভাল্লাগেনা তখন ।ইচ্ছে করে তোমাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে ।
কিন্তু তা সম্ভব নয় ।
আমি কোন বড়লোকের বাপের ছেলে নই ।
আমি একটা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ।তার উপর আমার মা নেই ।চাইলেও কোনদিন তোমার যোগ্য হতে পারবো না ।
একটা একটা করে প্রতিদিন তাই নিজের স্বপ্নগুলো মনের অনেক নীচে চাপা দিয়ে দেই !
জানি একদিন চিরদিনের জন্য তুমি আমাকে ভুলে যাবে ।
বিয়ের জন্য তোমাকে একদিন দেখতে আসবে ।
পাত্র তোমার মনের মতো হবে,আমার মতো ছাইপাশ,অযোগ্য হবেনা জানি ।যদি তাই হতো তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যেতে।
তারপর তোমার বিয়ের কথা পাকা হয়ে যাবে ।
নতুন জীবনে যাওয়ার জন্য তোমার তখন সারাক্ষণ অস্থির অস্থির লাগবে ।
একদিন ঘটা করে পানচিনি আর গায়ে হলুদ হয়ে যাবে ।
মনে আছে তোমার,
একদিন অনেক কেঁদে কেঁদে বলেছিলে কোনদিন যেনো তোমাকে ছেড়ে না যাই ।
আমি কথা দিয়েছিলাম কোনদিন ছেড়ে যাবোনা ।দ্যাখো,কথা রেখেছি,আমি আজো তোমার,চিরদিন তোমার থেকে যাবো।
তারপর সেই বিয়ের দিন চলে আসবে তোমার ।
লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরানো হবে তোমাকে ।
তোমার মনে থাকবে কি তখন আমার কথা ?
আমি বলেছিলাম-লাল নয়,নীল শাড়ি পরিয়ে তোমাকে বিয়ে করবো ।
সব কথা মিথ্যে করে তুমি ঘোমটা ফেলে বসে থাকবে ।
বিয়ের আগে মনে করে আমার চিঠিগুলো পুড়িয়ে ফেলো ।
নয়তো ওগুলি তোমাকে সুখে থাকতে দিবেনা ।যদি পারো আমার দেওয়া গিফটগুলি হকারদের কাছে বেঁচে দিও ।
তোমার সুখের সংসারে হয়তো ঐ বইগুলি আমার মতো ছাইপাশ ছেলেকে মনে করিয়ে তোমার মনটা খারাপ করে দিবে ।
কবুল কবুল কবুল....
বিদায় প্রিয়তমা,
চিরদিনের জন্য বিদায় ।
সুখে থেকো,ভাল থেকো ।
ইতি-
'স্বাধীন'
(তোমার পাগল হিমু) 😥
Comments
Post a Comment