বরাবর "রূপা", (২)
বরাবর "রূপা", (২)
-------
কেমন আছো ?
খারাপ থাকার তো কথা না ।
ভালোই আছো ।
আজ থেকে ৩ বছর আগে তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো ।
মায়াবী সেই চাহনী,পাতলা আবরণের
গোলাপী ঠোঁট,কোঁকড়ানো চুল-
আমাকে মুগ্ধ করার মতো যা যা
আছে তোমার সবকিছু নিয়েই সেদিন
আমাকে খুন করতে এসেছিলে তুমি !
আমি একটা কথাও বলতে পারিনি ।
তোমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়েছিলাম ।
মনে মনে ভাবছিলাম,
ঐ যে চলে যায় আমার রুপা,
একা করে দিয়ে গেলো একাকিত্বের রাজা কে !
এই ৩ টি বছর খুব কি বেশি দিন অপেক্ষার জন্য !
আমি এর থেকে ঢের সময় তোমার
জন্য অপেক্ষা করতে পারবো ।
৩০০ টি বছরও পারবো !
এই ৩ টি বছরের একটা দিনও
তোমাকে ভাবা ছাড়া থাকতে পারিনি ।
একদম হৃদয়ের গভীরে গেঁথে গেছো
তুমি ,মগজের প্রতিটা কোষ
দখল করে নিয়েছো ।
এ জন্মে তোমাকে আর ভুলি
কি করে বলো !
আমাকে তো তুমি ভুলেই
গেছো হয়তো ।তাইনা ?
হয়তো অন্য কারো প্রেমে পড়েছে হয়তো ।
আমার অথর্বকে আর কেন
বা মনে রাখবে ।
আমি তো তোমার যোগ্য নই ।
চিরাচরিত বাংলার জীবনানন্দ দাশ
টাইপের প্রেমিক তো তোমার
পছন্দ নয় ।
তোমার পছন্দ আধুনিক বিশ্বের মতো
ছেলেদের ।
আমি অবশ্য এই অভিযোগ মাথা
পেতেই নিবো ।
আমার ভেতর খাঁটি বাঙালীয়ানা আছে ষোলআনা,বাঙালীয়ানা ব্যতীত আমি একটা শূণ্য মরুভূমি ।
তোমার তো এসব পছন্দ না ।
তোমার পছন্দ গ্ল্যামার্স ।
অবশ্য এতে তোমার কোন দোষ নেই ।
এখনকার মেয়েরা একটু এমনই হয় ।
আমার দুর্ভাগ্য যে আমি ওরকম হতে
পারিনা,কখনো হতে চাইনা ।
এই যে সামান্য হলুদ পান্জাবীটাকে
আপন করে নিয়েছি,
আপন করেই রাখবো ।
তোমাকেও আপন করে রাখবো,
যদিওবা তুমি আর ফিরে নাও আসো ।
আমার আরো অনেক অযোগ্যতা
আছে যার জন্য আমি কখনোই
তোমাকে কোন দোষ দেইনা ।
আচ্ছা,
তুমি কি পারতেনা আমার সমস্ত
অযোগ্যতাকেও আপন করে নিতে ?
আমার সামান্য পোশাক আশাক,
উসকো খুসকো চুল,লাজুক মুখ,
আমার দেওয়া সামান্য চকলেট,
গিফট-এসবকে চিরদিন আপন করে
নিলে কি খুব ক্ষতি হতো তোমার ?
আজ আমি কর্পদশূণ্য লেখক।
কিন্তু জেনে রেখো,
আমার সমস্ত কবিতাগুলি একদিন
অসামান্য হয়ে বাংলা সাহিত্য
দখল করে নিবে ।
এই যে ভার্চুয়ালে এতো
সক্রিয় থাকি
অনেকেই ভাবে আমি
অনেকগুলি রিলেশন করি ।
আসলে আমি একটাও
রিলেশন করিনা ।
হ্যা,মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
রিলেশনে যেতে ।
ইচ্ছে করে প্রেম করতে ।
ইচ্ছে করে কারো ভ্যানিটি ব্যাগ
থেকে টাকা নিয়ে চা খেতে,
ইচ্ছে করে তাকে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া
গাছের নিচে বসতে ।
ফেসবুকের প্রেমগুলি এখন আর
দূরত্বে থাকেনা ।
বিশ্বাস থাকলে একদিন ভার্চুয়াল
রিলেশনও কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় এসে
মিলে যায় ।
আমারো ইচ্ছে করে মিলতে ।
অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়ে
তারপর ফিরে আসি ।
নিজের সাথে যুদ্ধ করে পারিনা ।
আমি তোমাকে না চাইলেও,
মন তোমাকে চায় ।
ঐ যে বলছিলাম,
মগজের কোষগুলিকেও দখল করে
রেখেছো তুমি ।
ওদেরকে পটিয়ে তারপর নিজে
এতোটা দূরত্বে কেন চলে গেলে !
আমার কি ভালবাসার
কমতি ছিলো বলো ?
এই একটা জিনিসই তো সবচেয়ে
ভাল পারি আমি,ভালবাসতে !
তোমাকে ভালবাসার মতো
আনন্দ আর কিছুতে খুঁজে পাইনা ।
তোমার সাথে আমার কোন
দৈহিক সম্পর্ক ছিলনা,
এটা যতোটা সত্য ততোটাই সত্য
এটা যে,তোমার সাথে আমার
একটা আত্মীক সম্পর্ক ছিল ।
তোমার আত্মা,আমার আত্মা,
আমার মন,তোমার মন-মিলেমিশে
একাকার হয়ে গিয়েছিলো ।
চলে গেলে কেন রূপা ?
খুব কি অসুখী রাখতাম তোমায় !
আমার সমস্ত সুখের সংজ্ঞা
তো তুমিই ।
জানিনা কখনো মনে পড়ে কিনা
আমায় ।
পড়ালেখায় হয়তো অনেক ব্যস্ত তুমি।
খুব ভাল ।
আমি সবসময় চেয়েছি তুমি
জীবনে কিছু করে দেখাও ।
এতো পরিমাণ অন্যের কথা ভেবেছি
যে নিজের কথাটা কখনো ভাবা হয়নি।
তোমাদের মতো যদি আপন স্বার্থটা
সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে জানতাম,
তাহলে আজ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র থাকতাম ।
ছাত্র হিসেবে কোনকিছুতে কি
কম ছিলাম বলো ?
অবশ্য ভাল জায়গায় পড়িনা
বলে আমার কোন আফসোস নাই ।
লেখালেখি করতে ভাল ভার্সিটির
কোন প্রয়োজনীয়তা নেই ।
ভার্সিটিতে পড়ে ৪ বছরে যা তোমরা
শেখো,তা বহু আগেই আমার শেখা হয়ে গেছে ।
যাক গে এসব কথা,
আমার এখন একটাই লক্ষ্য -
কবিতা লেখা আর বই প্রকাশ করা ।
একটা ছোটখাটো চাকরির জন্য
অবশ্য চেষ্টা করতেছি ।
চাকরিটা পেলে বিয়ে করার খুব
ইচ্ছে ছিল তোমাকে ।
আরো অনেককিছু লিখবো ভেবেছিলাম ।
ইচ্ছে করছেনা হঠাত্ ।
এই চিঠি তোমার কাছে পৌছাবে কিনা
জানিনা ।
সব ঠিক থাকলে আগামী বছর
একুশে বইমেলায় কোন এক স্টলে
আমার প্রথম একক বই নিয়ে বসে থাকবো ।
তুমি চাইতে আমি যেন বড়
কিছু হই ।
এটা বড়কিছু কিনা জানিনা ।
তবে এটা জানি যে,
প্রকৃতি তার বিশাল ভান্ডার থেকে
লেখক হওয়া ছাড়া আমাকে আর
কোন কিছু হওয়ার ক্ষমতা দেয়নি ।
প্রকৃতি খুব কৃপণতা করেছে
আমার সাথে !
ভাল থেকো তাহলে।
ইতি-
হিমু ।।
Comments
Post a Comment